মানুষ বা পশুপাখির শরীরে যেমন বিভিন্ন ভাবে রোগবালাই এর জন্ম নিতে পারে, তেমনি আপনার সাধের কম্পিউটারটিতেও নানা কারণে সংক্রামক দেখা দিতে পারে।আর তখন আমাদের মাথায় হাত।কিন্তু আগে থেকে ধারণা থাকলে আমাদের অনেক সুবিধা হয়।আজ আলোচনা করব কিভাবে বা কি কি কারণে কম্পিউটার ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
পারিপাশ্বিক কারণ:
তাপমাত্রা:
যে কয়েকটি
কারণে কম্পিউটারের ক্ষতি হয় তার মধ্যে অন্যতম হল তাপমাত্রা।যখন কম্পিউটার চলে তখন এর ভিতরের যন্ত্রপাতিগুলা
উত্তপ্ত হতে থাকে।এজন্য আপনার কম্পিউটারের আশেপাশে
একটু খোলা জায়গা রাখতে হবে,যেটি দিয়ে বাতাস বেরিয়ে যেতে
পারে।একটানা অনেকখন কম্পিউটার চালানো
উচিত হয়।
আদ্রতা:
বায়ুর
আদ্রতা যদি বেশি হয় তাহলে বায়ুর জলীয় বাষ্প কম্পিউটারের বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ,চুম্বকীয় ডিস্ক ইত্যাদির উপর জমা হয়।যা ধাতব যন্ত্রাংশে মরিচা ধরায়।অতিরিক্ত জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি পরিবেশকে স্যাঁতসেঁতে
করে দেয় যা বিভিন্ন যন্ত্রাংশে বা ছত্রাক জন্ম দিয়ে এদের কার্যকারীতা এবং আয়ুষ্কাল
কমিয়ে দেয়।
ধুলিকণা:
মূলত
এই জিনিসটিই আমাদের কম্পিউটারের বড় শত্রু।এর
কারণে কম্পিউটারে নানা রকমের সমস্যা হয়।ধুলাবালির
কারণে কী-বোর্ডের কী গুলো জ্যাম হয়ে থাকে আবার মাউস ঠিকমত কাজ করে না।ধুলাবালি আপনার স্বাস্থের জন্য ও ক্ষতিকর।
কার্বন কণা:
আমরা
অনেকেই যে জিনিসটির বেশি সচেতন থাকি না,তা হল এই কার্বন
কণা।আপনার কম্পিউটারের আশেপাশে কোথাও
রান্নাবান্নার ব্যবস্থা থাকলে,কলকারখানার বা অন্য কোন
উৎস থেকে ধোঁয়ার ব্যবস্থা থাকলে তা থেকে আগত কার্বন কণা আপনার কম্পিউটারের ক্ষতি করতে
পারে।অনেক সময় শর্ট সার্কিট ও হতে
পারে।
ক্ষয় বা করোশন:
এটি
অনেক সূক্ষ একটি বিষয়।কম্পিউটারের অভ্যন্তরে বিভিন্ন
ধরনের সংযোগ পিন,ক্যাবল,ইন্টারফেস কার্ড,চিপ ইত্যাদি ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ
প্রতিনিয়ত রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে সরু হয়ে যায়।এ ধরনের রাসায়নিক পরিবর্তনকে ক্ষয় বা করোশন বলে।
কম্পিউটার
নষ্ট বা ক্ষতি হওয়ার জন্য বিদ্যুৎজনিত সমস্যা অন্যতম।বিদ্যুৎ প্রবাহজনিত সমস্যাকে আমরা ৫ ভাগে ভাগ করতে
পারি।
১)ব্রাউন আউট: কোন
কারণে যদি এমন হয় যে পরিমিত মাত্রার চেয়ে বিদ্যুৎ সরবারহের ভোল্টেজ কমে যায় তাহলে তাকে
ব্রাউন আউট বলে।অতিরিক্ত বিদ্যুৎ চাহিদা মিটানোর
অক্ষমতার জন্যই এমনটা ঘটে থাকে।
২)ব্লাক আউট: অনেক
সময় দেখা যায় যে হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে যায়,একে ব্লাক
আউট বলে।সাধারণত ঝড়,বজ্রপাত,সুইচিং সমস্যা ইত্যাদির কারণে এমনটা হয়।এতে র্যামের তথ্য
মুছে যায়।কোন কারণে যদি এর ফলে কম্পিউটার
বন্ধ হয়ে যায় তাহলে পরবর্তীতে চালু করার সময় সবকিছু(যন্ত্রপাতি)
ভালমত দেখে নিতে হবে।ঝড়,বজ্রপাত অব্যাহত
থাকলে কম্পিউটার না চালানোই ভাল।
৩)ট্রানসিয়েন্ট: বিদ্যুৎতের
লাইনে সৃষ্ট ভোল্টেজ বা কারেন্টের অপেক্ষাকৃত বড় ধরনের স্পাইককে বলা হয় ট্রানসিয়েন্ট।তবে কথা হল যে,অনেক
ট্রানসিয়েন্ট পাওয়ার সাপ্লাই দ্বারা বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে নিঃশেষ হয়ে যায়।কিন্তু সমস্যা হল অনেক ট্রানসিয়েন্ট এই বাঁধা অতিক্রম
করে কম্পিউটারের বর্তনী পর্যন্ত পৌঁছে যায়।যার
ফলে ডেটা মুছে যেতে পারে বা পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।কখনও কখনও বর্তনী সর্ম্পূণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৪)নয়েজ: বিদ্যুৎ সরবরাহের
লাইনে বিভিন্ন ধরনের নয়েজ হতে পারে। যেমন:বিদ্যুৎ প্রবাহের আপ-ডাউন,বিশষ করে ভোল্টেজ বেড়ে গেলে নয়েজ হয়ে থাকে।এ অবস্থায় কম্পিউটারের মারাত্বক ক্ষতি হতে পারে।
৫)স্পইক ও সার্জ: হঠাৎ
করে অত্যন্ত ক্ষুদ্র সময়ের জন্য বৈদ্যুতিক শক্তি বেড়ে যাওয়াকে স্পাইক বলে।স্পাইক নিবারনের ব্যবস্থা না থাকলে সার্কিটের ক্ষতি
হয়।আর বিদ্যুৎ বিভবের ক্ষণস্থায়ী
বেড়ে যাওয়াকে বলে সার্জ।মিটারে প্রদর্শন করা যায় এতটুকু
সময় পর্যন্ত সার্জের স্থায়িত্ব থাকে।
ব্যবহারকারীর অসাবধানতার জন্য যেসব ক্ষতি হয়:
আপনার
গায়ের পোশাকটি কতটা সুন্দর থাকবে তা কিন্তু আপনার উপরই নির্ভর করে।পোশাকটি পড়ে বের হওয়ার পর আপনি যদি আপনার পোশাকটির
প্রতি যত্নবান না হন,তবে কিন্তু তা নষ্ট হবার সম্ভাবনা
থাকে।ঠিক তেমনি একটি কম্পিউটারের স্থায়িত্ব
নির্ভর করে তার ব্যবহারকারীর উপর।সাধারণ
ব্যবহাকারীর যে সমস্ত ভুলগুলোর কারণে কম্পিউটারের ক্ষতি হয়ে থাকে:
*অনেক সময় দেখা
যায় কম্পিউটারের সিস্টেম ইউনিটে ঝাকুনী খায়।এতে হার্ডডিস্কের মারাত্বক ক্ষতি হয়।
*অনেক সময় ডিস্ক
ডুকাতে গেলে আমরা জোর করে তা ডুকাতে চেষ্টা করি।এতে শুধু ডিস্কেরই ক্ষতি হয় না।ড্রাইভের হেড এর ও ক্ষতি হয়।
*সি.পি.উ,মনিটর,প্রিন্টার ইত্যাদির প্লাগগুলো সঠিকভাবে না লাগানোর ফলে মারাত্বক দূর্ঘটনা
ঘটতে পারে।
*আমরা অনেক
সময় ডিস্ক,প্রেনড্রাইভ,ওয়েভ ক্যাম
ইত্যাদি যত্রতত্র ফেলে রাখি,এতে কম্পিউটারের ক্ষতি হতে পারে।
*কম্পিউটারের
আশেপাশে খাওয়া-দাওয়া,ধুমপান করা,চা-কফি পান করা ত্যাগ করতে হবে।অসাবধানতাবশত যদি কম্পিউারের কোন যন্ত্রের উপর
এসব পদার্থ পড়ে তাহলে তা মারাত্বক ক্ষতির কারণ।
*খুব জোড়ে আমরা
অনেকে কী-বোর্ডে আঘাত করি।এটা করা যাবে না।
*অনেক সময় কম্পিউটারের
সুইচ বন্ধ করে আবার তা সাথে সাথে চালিয়ে দেওয়া যাবে না।এতে বিদ্যুৎ প্রবাহের আপ-ডাউন এর ফলে মনিটরের পিকচার টিউভ নষ্ট হয়ে যেতে পারে অথবা মূল্যবান কোন
আইসি কেটে যেতে পারে।
এছাড়াও
ভাইরাস বা অন্যান্য নানাবিধ কারণে কম্পিউটারের ক্ষতি হতে পারে।
আজ এ
পর্যন্ত।আল্লাহ হাফেজ।কথা হবে আগামি পর্বে।
ভালো লিখেছেন
ReplyDeleteটিপ্সটা অনেক কাজের, ধন্যবাদ